শস্য-শ্যামল বাংলাদেশটি সুজলা-সুফলা হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রাচীন কাল থেকেই এদেশটি সম্পদে সমৃদ্ধ হয়েছে এখানকার অসংখ্যা নদ-নদীর কারণে। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে এক হাজারেরও বেশি নদ-নদী বয়ে গেছে। এসব প্রবাহের প্রধান উৎস হিমালয় পর্বতমালা। এছাড়াও গারো পাহাড়, খাসিয়া ও জৈন্তিয়া পাহাড়, আসামের লুসাই পাহাড়, ত্রিপুরার পাহাড়ি এলাকা, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো এবং দেশের অভ্যন্তরের বিল ও হাওয় থেকে উৎপন্ন অসংখ্যা নদ-নদী বাংলাদেশের সব জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এসব নদীর স্রোতে বয়ে আনা হাজার হাজার টন পলি কাদা দ্বারা বাংলাদেশের জমি উর্বর হয়েছে। এই জমিতে উৎপন্ন ফসলে আমরা সমৃদ্ধ। নদী-ভিত্তিক বাংলাদেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধি হঠাৎ করেই ব্যাহত হলো পার্শ্ববর্তী দেশের বিরূপ আচরণসহ নানাবিধ প্রাকৃতিক পরিবর্তের কারণে। বাংলাদেশের অধিকাংশ নদ-নদী আজ বিলুপ্ত কিংবা প্রায় বিলুপ্তির পথে। অথচ বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডটি গঠিত হয়েছে এবং যুগে-যুগে সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছে গেছে এখানকার অগুনতি নদ-নদীর কল্যাণ। বাংলাদেশের প্রায় সব সমৃদ্ধ জনপদ গড়ে উঠেছে নদীকে কেন্দ্র করে। হাতে-গোনা অতি সামান্য কয়েকটি শহর গড়ে উঠেছে রেল স্টেশন, তীর্থ-ভূমি কিংবা মহাসড়কের ওপর ভিত্তি করে। বাংলাদেশের সভ্যতা গড়ে উঠেছে মূলত নদ-নদীর ধারেই। নদী-কেন্দ্রিক এই সভ্যতা আজ বিপর্যস্ত। বাংলাদেশের নদ-নদীগুলো আজ পৃথিবীর যেকোনো দেশের নদ-নদীর চেয়ে অনেক বেশি বিপর্যয়কর অবস্থায় রয়েছে। এখানকার বৃহৎ নদ-নদীগুলোর উৎসমুখ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, বরাকসহ অধিকাংশ নদ-নদীর উজানে দিয়ে পানি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশের নদ-নদীগুলো নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। নদী-শাসন ও নদী-কেন্দ্রিক নানাবিধ সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং পটভূমি নিয়ে এই গ্রন্থ বর্তমান বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থাকে ফুটিয়ে তুলেছে।
আমাদের নদ-নদী
মাহবুব সিদ্দিকী