মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের গর্বিত সন্তান হয়ে লেখক সাজ্জাদুল হাসান একাত্তরের স্মৃতি ও স্মৃতিময় স্থানগুলোর অমোচনীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথাই লিখেছেন। কৃষি অর্থনীতি’র ধী এবং শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে সংকলনধর্মী এই প্রবন্ধগ্রন্থে লেখক হাজির করেছেন বঙ্গবন্ধুর সমবায়, কৃষি ও কৃষকভাবনা’, ‘হাওড় ও প্রান্তিক অর্থনীতি, ‘সমুদ্র-অর্থনীতি’র চলমান রূপ, স্বপ্ন ও সম্ভাবনার চিন্তা ও অভিজ্ঞান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে চাকরিজীবন শেষ করে অবসরে এসে লেখক নিজের অধীত জীবনের অভিজ্ঞতা এবং পৈতৃক ইতিহাসকেই লিখেছেন এ গ্রন্থে। লেখকের পিতা ডা. আখলাকুল। হোসাইন আহমেদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শানুসারী রাজনীতিবিদ ছিলেন, যিনি ১৯৭০-এর নির্বাচনে গণপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি ভারতের মেঘালয় রাজ্যে স্থাপিত বিভিন্ন ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে ট্রেনিংয়ে। পাঠানো এবং বিপর্যস্ত শরণার্থীদের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। পিতার চিন্তা ও চৈতন্যেই স্নাত হয়েছেন লেখক। একাত্তরে পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া একজন কিশোর পিতার সঙ্গে উদ্বাস্তু শিবিরে ছিলেন। সেই ইতিহাস খুঁজতেই ২০১৮ সালের এপ্রিলে মেঘালয়ের ওই ক্যাম্পগুলোতে গেছেন। বলতে পারি, লেখক চিত্রময় ভাষা ও বর্ণনায় আমাদেরও সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন। ততদিনে পিতাও পরলোক গমন করেছেন। গদ্যের সর্বাংশে আছে মুক্তিযুদ্ধের নির্জন-স্মৃতি; পিতার অস্তিত্বে সমর্পিত হতে হতে বাঙালির গৌরবময় ইতিহাসের নিজস্ব বীক্ষণ এই গ্রন্থ। লেখকের এই অভিজ্ঞতা পড়তে গিয়ে যে কোনো পাঠক নিজের জীবন এবং বাংলাদেশকেই পড়বেন। কাঠিন্যধর্মী তথ্যের সমাহারে এই গ্রন্থ ক্লান্তিকর হয়ে ওঠেনি; সহজ-সুন্দর গদ্যে, তথ্য-উপাত্তে, যুক্তিময়তা। এবং আন্তরিক অভিজ্ঞানই এই লেখাগুলোর ভিত্তি এবং শক্তি। বাংলাদেশের ইতিহাস ও অর্থনীতিকে অনুভব করার যে-বর্ণনা এখানে আছে, তা অনেক বইয়ে অস্পষ্ট কিংবা আড়ালিত দৈনিক পত্রিকায়। প্রকাশিত হয়ে লেখাগুলো আগেই পাঠকনন্দিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে পাঠকের আকর্ষণকেন্দ্র থেকে আবেদিত লেখকের চিন্তা ও অভিজ্ঞতার এই গদ্যগুলো ধরা রইল দুই মলাটের ঋজু বন্ধনে।
আমার বাবা ও একাত্তরের অম্লান স্মৃতি
সাজ্জাদুল হাসান