‘শব্দতত্ত্ব’ বইটিতে রবীন্দ্রনাথের প্রায় সারাজীবনের ভাষাচিন্তা, মতান্তর, বিশ্লেষণ-প্রবণতা, ধারণার বিবর্তন ইত্যাদি মুদ্রিত হয়ে আছে। মূলত এখানে বাংলাভাষার স্বভাব ও স্বাতন্ত্র আবিষ্কারের চেষ্টা করা হয়েছে। একদিকে ভাষার সর্বাঙ্গীণ রূপ সম্বন্ধে পাশ্চাত্য ভাষাবিজ্ঞানীসুলভ সচেতনতা, অন্যদিকে বাংলাভাষার বিশ্লিষ্ট প্রকৃতি সম্বন্ধে তীক্ষ্ণ বোধ- রবীন্দ্রনাথের এই বইটি সমস্ত পণ্ডিতি আলোচনা থেকে এক অভিনব স্বাতন্ত্র দিয়েছে।
সমকালীন ভাষাচর্চার গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে তাঁর পরিচ্ছন্ন ধারণা ছিল এবং তিনি অন্তত ভারতীয় ভাষা-সম্পর্কিত রচনাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়েছিলেন। তিনি প্রচলিত কাঠামোতে বাংলা ভাষা-বিশ্লেষণের বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়েছিলেন। পেশ করেছেন নতুন তত্ত্ব ও প্রণালি-পদ্ধতি। বাংলা ভাষার নিরূপিত কোনো রূপের ভিত্তিতে তিনি ‘ভাষাতত্ত্ব’ রচনা করেননি, খোদ বাংলা ভাষা আবিষ্কারই তাঁর আলোচনা-পর্যালোচনার লক্ষ্য। প্রচলিত অভিধান, ব্যাকরণ আর লিখিত সাহিত্য থেকে উপাত্ত সংগ্রহের পাশাপাশি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে রবীন্দ্রনাথ কথ্য উৎসের আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলা ভাষাতত্ত্বের বা বাংলাভাষার ইতিহাসের আলোচকদের মধ্যে একজন অগ্রণী পথিকৃৎ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ । ভাষার উপাদান বিচ্ছিন্নভাবে বিশ্লেষিত হওয়ার উপায় নেই; যদি করতেই হয়, বৃহত্তর কাঠামোর সাপেক্ষেই করতে হবে । রবীন্দ্রনাথ তাঁর নিজের আলোচনায় এ রকমই করেছেন।
বাংলা শব্দতত্ত্ব
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর