গতানুগতিক প্রবন্ধ ধারার মতো নয় বৈশাখী মেলা ও অন্যান্য গ্রন্থ। প্রচলিত মনন-শাসিত প্রবন্ধ পাঠের যে কষ্টার্জিত শ্রম ও অভিজ্ঞতা তা থেকে মুক্ত করে এই প্রবন্ধগ্রন্থ একই সঙ্গে মনন ও হৃদয়ের দ্বরকে উন্মুক্ত রেখে পড়ুয়ার পাঠ অভিজ্ঞতাকে বিকশিত করবে। তৎসম শব্দের কড়া-কড়া আঘাতে কিংবা গভীর ধ্যানের বিবরে নিক্ষিপ্ত হতে হবে না, বরং এই গ্রন্থপাঠ বাড়তি আমেজ হিসেবে আমাদের সামনে খুলে দেবে পাঠের সহজ ও স্বচ্ছন্দ গতি। এ কারণে এর বিষয়বৈচিত্র্য, ভাষা ও ভাবনার মধ্যে দৃষ্ট হবে এক সুখকর স্বয়ম্পূর্ণ ব্যঞ্জনা। এই গন্থের প্রাবন্ধিক বিন্যস্ত করেছেন দুই ধরণের বিষয় : এক. ঐতিহ্যনির্ভর বাঙালির উৎসব-পার্বণ উদযাপনের নানা প্রসঙ্গ; দুই. শিল্পসাহিত্য বিষয়ক-কথাসাহিত্য, কবিতা ও চিত্রকলার আলোচনা। বাঙালি ও বাঙালি মুসলমানের ঐতিহ্য, লোকভাবনা, রিচুয়াল, লোকউৎসব, পার্বণ, মেলা প্রভৃতির তথ্যসমৃদ্ধ বর্ণনার পাশে প্রাবন্ধিক স্থান দিয়েছেন বিশ শতকীয় সাহিত্য আদর্শের কজন উৎকৃষ্ট কবির কাব্যচৈতন্যের মনোগ্রাহী বিশ্লেষণ, কল্লোলীয় পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য, চারুকলার পঞ্চাশ বছর, মুর্তজা বশীরের শিল্পভাবনা এবং ভাষা-আন্দোলন ও একুশের চেতনার এক উজ্জ্বল স্মৃতিসাক্ষ্য। কেবল তত্ত্ব কিংবা তথ্যের ভারে ভারাক্রান্ত না- হয়ে প্রতিটি প্রবন্ধ অর্জন করেছে ভাবনা-উদ্রেককারী বিষয়বৈচিত্র্যের বিশিষ্টতা। প্রাবন্ধিক সীমিত পরিসরে তাঁর ভাবনাপুঞ্জকে গ্রন্থিত করেছেন। প্রতিটি প্রবন্ধেই তিনি ঐতিহ্যের বর্ণনা করতে গিয়ে বাঙালি জীবনের শিকড় সন্ধানী মানসকে উম্মোচন করেছেন। যন্ত্রজর্জর জীবনের অবরুদ্ধতা ও টেকনিক সর্বস্ব রচনার কথা ভুলে গিয়ে, আমরা নতুনভাবে, স্বচ্ছন্দ হতিতে বাঙালি জীবনের নানা উৎসব, লোকমেলা ও শিল্পসাহিত্যের নানা প্রসঙ্গের বিশ্লেষণ ও বিবেচনার আস্বাদ গ্রহণ করে পরিতৃপ্ত হব বৈশাখী মেলা ও অন্যান্য পাঠ করে।
বৈশাখী মেলা ও অন্যান্য
মনজুরুর রহমান