১৯৮৬ সালে প্রাক্তন সােভিয়েত ইউনিয়নের দুই প্রজাতন্ত্র ইউক্রেন এবং বেলারুশের মধ্যবর্তী একটি সীমান্ত শহর চেরনােবিলে ২৬শে এপ্রিল রাত। ১:২৩:৫৮ মিনিটে পরমাণু বিদ্যুৎ স্টেশনে রিএ্যাক্টর বা পারমাণবিক চুল্লী বিস্ফোরণের পর রাষ্ট্র থেকে প্রায় ৮,০০,০০০ যুবক পুরুষকে পারমাণবিক বর্জ্য পরিষ্কার করার কাজে নিযুক্ত করা হয়। তাদের ভেতর ২৫,০০০ পুরুষ কিছুদিন পরেই তেজস্ক্রিয়তার শিকার হয়ে মারা যান। তবে এটি সরকারী হিসাব। লিকুইডেটরস কমিটি বা পারমাণবিক বর্জ্য পরিষ্কার করার কাজে নিয়ােজিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কমিটির হিসাব মতে ১,০০,০০০ মানুষ এতে মারা গেছিলেন। চেরনােবিলের এই দুর্যোগ বিশ শতকের সেরা দুর্যোগ।
ইউনিসেফের এক পরিসংখ্যানে এক বেলারুশ প্রজাতন্ত্রে ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ সাল নাগাদ নার্ভাস সিস্টেম ডিজঅর্ডারের রােগ ৪৩ শতাংশ, হৃদরােগের হার ৪৩ শতাংশ, পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ জনিত রােগ ২৮ শতাংশ, অস্থি, মাংসপেশি ও দেহের ভেতরের নানা সন্ধি বা সংযােগ-স্থাপণকারী টিস্যুর গােলযােগ ৬২ শতাংশ এবং ডায়াবেটিস রােগের হার ২৮ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। মার্চ ২০০২-এ ইউক্রেন সরকারের ‘চেরনােবিল ইন্টার ইনফর্ম এসােসিয়েশন’ জানায় যে ইউক্রেনের ত্রিশ লক্ষ মানুষের ৮৪ শতাংশই অসুস্থ হিসেবে নথিবদ্ধ যাদের ভেতর রয়েছে দশ লক্ষ শিশু।
এছাড়াও দুর্ঘটনার পরপর চেরনােবিলের পাশে অবস্থিত প্রিপিয়াতের মত বড় শহর সহ অসংখ্য গ্রাম খালি করে প্রচুর মানুষকে রাষ্ট্রের ভেতরেই অন্যত্র অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হতে হয়েছে। আজো বেলারুশ ও ইউক্রেনে প্রচুর গ্রাম ও একাধিক শহর ভুতুড়ে বা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রচুর কৃষক পরিবারকে তাদের দীর্ঘদিনের ফসলী জমি, ঘর-বাড়ি ছেড়ে উদ্বাস্তু হতে হয় যা তাদের গভীর মানসিক পীড়া দিয়েছে। কোন কোন বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা হয়তাে একাই থেকে গেছেন নিঃসঙ্গ গ্রামগুলােতে। মানুষের পাশাপাশি প্রচুর গবাদি পশু বা এমনকি কুকুরও বংশগতি বিকার বা জেনেটিক মিউটেশনে আক্রান্ত। হয়। রাষ্ট্রের উদ্যোগে অনেক অসুস্থ পশু গুলি করেও মেরে ফেলা হয়।
চেরনোবিলের কণ্ঠস্বর: একটি পারমাণবিক দুর্ঘটনার কথ্য ইতিহাস
অদিতি ফাল্গুনী