কোন ঐতিহাসিক নগরীর ভ্রমণকাহিনি লেখা সহজ কাজ নয়। আর সে লেখায় পাঠকের মনােযােগ ধরে রাখা আরাে কঠিন। আর সেটা যদি হয় ইস্তাম্বুলের মতাে নগরী, যে নগরী পার করে। এসেছে কয়েক সহস্র বছর, তাকে কলমের আঁচরে ফুটিয়ে তােলা রীতিমত দুরূহ কাজ। তবে এই কঠিন কাজটি অত্যন্ত সহজভাবে এবং অতি সুচারুরূপে সম্পন্ন করেছেন জিকরুর রেজা খানম। সহস্র বছরের ইস্তাম্বুল বইটি হাতে নিলে পাঠকের নামিয়ে রাখতে কষ্ট হয়। এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করার মতাে বই। এ বই ভাল লাগবে সবারই। বােদ্ধা-পাঠক থেকে নবীন-পাঠক, সকল শ্রেণির পাঠকের মনের খােরাক যােগাবে। এ বইতে আছে ইতিহাসের গুরুগম্ভীর কথা, তবে তা এমনই সহজ ভাষায় সহজ ভঙ্গিতে যে তা অনায়াসে পাঠককে। টেনে নিয়ে যায় শেষ পাতা অবধি । এ বইতে আরাে আছে লেখকের নিজস্ব স্টাইলে বর্ণিত ভ্রমণকালে ঘটে যাওয়া কিছু মজাদার ঘটনা। আপাত সামান্য ঘটনাই লেখকের বর্ণনার গুণে হয়ে ওঠেছে অসামান্য। ঘটনার পাত্রপাত্রিরাও লেখকের কলমে হয়ে ওঠেন একেবারেই জীবন্ত। জিকরুর রেজার কলম ছবি আঁকে, আর সে ছবি পাঠকের মনের চোখে ছায়াছবির মতাে ফুটে ওঠে। তার লেখায় সহজে ধরা পড়ে দুনিয়ার গরীব-দুঃখী মানুষের প্রতি সীমাহীন পক্ষপাত । যে পক্ষপাত থেকে দুনিয়ার সকল রাজা বাদশাহর । স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে মাঝে মাঝেই সােচ্চার হয়ে উঠেছে তার কলম । তবে সমালােচনার পাশাপাশি তাদের কীর্তিগুলােকেও তুলে ধরেছেন, অবহেলা করেননি। ইস্তাম্বুলের অতীত গৌরব, কীতিগাঁথার পাশাপাশি আঁচ করার চেষ্টা করেছেন বর্তমান ইস্তাম্বুলের। হৃদস্পন্দনকে, ধরতে চেয়েছেন এর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিধিকেও। তাঁর লেখায় উঠে এসেছে। আধুনিক তুরস্কের জনক কামাল আতাতুর্কের কথাও। অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে সহজ ভাষায় ইতিহাসের কঠিন সত্যকে পাঠকের মুখােমুখি করার নৈপুণ্য আছে তার লেখায়। সহস্র বছরের ইস্তাম্বুল বইটি সকলের ভাল লাগবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
হাজার বছরের ইস্তাম্বুল
জিকরুর রেজা খানম