বাংলাদেশের সাহিত্যিক বা রাজনীতির ছাড়া আত্মজীবনী রচনা করার তেমন ঐতিহ্য নেই। সেদিন থেকে প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা, সংবাদপত্র প্রকাশক-সম্পাদক এবং শিল্পপতি কাজী শাহেদ আহমেদ রচিত জীবনের শিলালিপি গ্রন্থটি একটি ব্যতিক্রম। এই গ্রন্থটি নানা কারণে উল্লেখযোগ্য। যেখানে তিনি ইংরেজ, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ আমলের জীবনের অভিজ্ঞতা নিজস্ব ভঙ্গিতে অকপটে প্রকাশ করেছেন। কাজী শাহেদ আহমেদ আক্ষরিত অর্থে একজন কর্মবীর। এক জীবনে তিনি যে-সব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তা অভাবনীয়। এই আত্মজীবনীতে তিনি তাঁর কর্ম ও ব্যক্তিজীবনের পরিচয় সহজ-সরল-সাবলীল ভাষায় তুলে ধরেছেন। তাঁর এই অভিজ্ঞতার বর্ণনার মধ্যে দিয়ে শুধু তাঁর বা তাঁর পরিবারের কাহিনি বিবৃত হয়নি, সঙ্গে সঙ্গে বিশ শতকের চল্লিশ দশক থেকে একুশ শতকের প্রথম দশক অবধি এ অঞ্চলের একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। বিশ শতকের চল্লিশ দশক ছিল অত্যন্ত ঘটনাবহুল; দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও দেশবিভাগ আমাদের অঞ্চলকে ক্ষতবিক্ষত, ছিন্নবিছিন্ন করে তুলেছিল। সেই পটভূমিতে তাঁর শৈশবের দিনগুলোকে মর্মস্পর্শী ভাষায় বর্ণনা করে গেছেন। দেশ বিভাগ-পরবর্তী পাকিস্তান আমলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে তাঁর ছাত্র ও কর্মজীবন এই গ্রন্থে উঠে এসেছে একের পর এক ছবির মতো। ঘটনা ও চরিত্র বর্ণনায় তিনি সিদ্ধহস্ত। তাঁর প্রত্যক্ষ করা বিভিন্ন ঘটনা জীবন্ত হয়ে উঠেছে। পশ্চিম পাকিস্তানে সামরিক বাহিনীতে তাঁর কর্মজীবনের যে অভিজ্ঞতা তার মধ্যে পাঞ্জাবি, পাঠান প্রভৃতি জাতিসত্তার গভীর পরিচয় ফুটে উঠেছে। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ও অব্যবহি পরবর্তীকালে পশ্চিম পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে কর্মরত বাঙলি- সৈনিক, অফিসার ও তাঁদের পরিবারবর্গ যে দুর্বিষহ জীবনযাপন করেছিলেন বইটি তার প্রামাণ্য দলিল। গ্রন্থটিতে কাজী শাহেদ গভীর মমতার সঙ্গে তাঁর কর্মজীবনের পাশাপাশি পারিবারিক ও সাংসারিক জীবনকে রূপায়িত করেছেন।
জীবনের শিলালিপি
কাজী শাহেদ আহমেদ