পৃথিবীতে যুগে যুগে মহাপুরুষের আবির্ভাব হয়েছে মানুষকে সঠিক পথে, সত্যের পথে পরিচালিত করার জন্য, খারাপ মানুষকে ভাল করার জন্য। আজ আমাদের সমাজে ভাল মানুষের বড় অভাব। সৎচরিত্রবান, মেধাবী, ধর্মপ্রাণ, দেশপ্রেমিক মানুষ সংখ্যায় খুব কম। এই সংখ্যালঘু ভাল লােকগুলি সমাজে নিগৃহীত হয়ে আছেন অসৎ, চরিত্রহীন, দুর্নীতিপরায়ণ প্রভাবশালী লােকদের দাপটে। এই সমাজ ব্যবস্থা পালটাতে হবে। এবং তা করতে হলে, ভাল মানুষটিকেই প্রতিবাদমুখর হতে হবে। অন্যায়, অধর্ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সােচ্চার হতে হবে। যখন বঙ্গভবনে ছিলাম আমার দুর্বল কণ্ঠে উচ্চারিত প্রতিবাদের একটি প্রচেষ্টামাত্র।
সেনাবাহিনীতে পেশাগত কারণে সেনা-অফিসারদের জন্য দেশের জনগণের সঙ্গে খােলাখুলি মেলামেশার সুযােগ সব সময়ই খুব সীমিত। কিন্তু আমি যখন বঙ্গভবনে এম. এস. পি. পদে বদলী হয়ে আসি তখন মনে হলাে যেন আমার সামনে দেশের মানুষের সাথে যােগাযােগের সমস্ত দরজা-জানালা উন্মুক্তপ্রায়। দেশের অনেক নেতৃস্থানীয় মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। দেখা হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষকেও দেখেছি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পরিবেশে। দেশ ও দেশের মানুষ সম্বন্ধে আমার জ্ঞানের পরিসর বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে, রাষ্ট্রপতি আহসানউদ্দিনকে খুব ভালভাবে দেখবার ও জানবার সুযােগ হয়েছে আমার। 'যখন বঙ্গভবনে ছিলাম’ লেখা হয়েছে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গির আলােকেই। এটা বলা প্রয়ােজন যে.হয়তাে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বা বিষয় এ বইয়ে স্থান পায়নি। অথবা এমন সব কথা লেখা হয়েছে যা অনেকের কাছে কোন গুরুত্বই বহন করে না। তবে এটা সত্য যে উদ্দেশ্যপ্রণােদিতভাবে কোন বিষয় বা ঘটনাকে উপস্থাপন করা হয়নি। আমার স্মৃতিতে যা কিছু ভাস্বর হয়ে আছে এবং যা লেখার যােগ্য বলে আমি মনে করেছি তা লিখতে একটুও দ্বিধা করিনি। যদি কোথাও কোন ভুল হয়ে থাকে তা যথার্থই ভুল। ইচ্ছাকৃত নয়। | আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় যারা আমাকে সাহায্য করেছেন তাদের মধ্যে সর্ব প্রথমে দৈনিক ভােরের কাগজ-এর সম্পাদক মতিউর রহমান সাহেবের কথা বলতে হয়। তিনিই আমাকে আমার বঙ্গভবনে থাকা অবস্থার অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে লিখতে বলেছিলেন। তাঁর অনুপ্রেরণায় এবং সাহায্যেই আমার পক্ষে যখন বঙ্গভবনে ছিলাম’ লেখা সম্ভব হয়েছে। আমি মতিউর রহমান সাহেবকে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
যখন বঙ্গভবনে ছিলাম
ব্রিগেডিয়ার শামসুদ্দিন আহমেদ