তরুণ বয়সের মার্কস ও এঙ্গেলস, উনিশ শতকের মাঝামাঝি বলেছেন সমসাময়িক ফয়েরবাখ, বাউয়ের, স্টিরনারের মতো জাঁদরেল সব দার্শনিক আর জর্মান সমাজতন্তের নানান নবীপয়গম্বরের পর্যালোচনায়। হেগেলীয় দর্শনের মর্মশাঁস বের করে এনে আধুনিক জর্মানিতে দুনিয়া তোলপাড় করা বিপ্লব সম্পন্ন করার দাবিদার বামপন্থি হেগেলিয়ানদের দুর্দান্ত মৌলিকতায় মোকাবিলা করেছেন; চিন্তার বিমূর্ত স্বাধীন অস্তিত্বের নেকাব খসিয়ে দিয়ে। একই সঙ্গে তথাকথিত বস্তুবাদ ও ভাববাদের গোড়াসুদ্ধ নাড়িয়ে দিয়ে হাজির করলেন মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক বিষয়ক প্রস্তাবনা… অর্থশাস্ত্র, ইতিহাস ও উৎপাদন সম্পর্ক বিষয়ক প্রস্তাবনা… অর্থণাস্ত্র, ইতিহাস ও উৎপাদন সম্পৰেরি ভাবনা ৷ জর্মান ভাবাদর্শিক পরিমণ্ডলে উখাপিত প্রশ্নের ভাবগত মিমাংসায় পৌছে বের করে আনলেন জীবন ও চেতনার যুগপথ সম্পর্কের ভিতর দিয়ে কি করে গড়ে ওঠে ভোগ, বিনিময়, বিতরণ ও উৎপাদন-… জীবনেরই সচেতন বহিঃপ্রকাশ। স্বপ্রাণ মানুষের ইদ্রিয়পরায়ন কর্মতৎপরতার জ্যির দিয়ে কিভাবে ইতিহাসের রূপ ও রূপান্তর ঘটে আর হাজ্যি বৈষয়িক পরিস্থিতির মধ্যে জগৎ বদলানোর কতসিত্তার আর্বিভাবের শর্ত তৈরি হয় তার সন্ধান করেছেন মূর্তনির্দিষ্টি ইতিহাসে; শ্রমবিভাজন, সম্পত্তির রূপ ও সম্পর্কের মধ্যে ক্রমাগত পরিবর্তিনের তাৎপর্যে। কোনো পর্যায়বাদি ইতিহাস তত্ত্ব বা তথাকথিত সমাজ কাঠামোর ফর্মুলা নয়। মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ককে জর্মান ভাবাদর্শে মার্কস- এ্যাঙ্গেলস যেভাবে বুঝিয়েছেন সেই প্রশ্ন ও প্রসঙ্গ… জীবন ও চেতনার একে অপরের নিশ্চয়তায় প্রতিনিয়ত পুনরুৎপাদনে সক্রিয় মানুষের সম্পর্কের শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হয়ে প্রচলিত মার্কসবাদ যে ‘দ্বান্দিক বস্তৃবড়াদ’ খাড়া করেছে তাতে শুধু অন্বেষণের অতিমুখটইি পাল্টে যায় নি বরং খোদ বিপ্লবী রাজনীতির জন্য মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করেছে, হয়েছে বিপর্যয়ের কারণ। সেই বিপত্তি ও বিপদের নিরসন হতে পারে যদি আমরা পুনরায় মনযোগী হতে পারি আদি মোকাবেলার জায়গাগুলোতে। তাই চিন্তার বৈপ্লবিক সম্ভাবনা অনুধাবন ও সৃষ্টিশীল প্রয়োগের ক্ষেত্র প্রসারিত করতে গোড়ার জায়গায়, জর্মান ভাবাদর্শে ফিরে আসা, যেখানে দুনিয়া বদলানোর দার্শনিক মিমাংসায় নিরত হয়ে মার্কস-এঙ্গেলস উপনিত হয়েছেন ‘ভাব’ ও ‘বস্তুময়তা’র যুগল সম্মিলত বিচারের নতুন দিগম্ভে- অর্থশাত্রীয় বিশ্নেষণে ।
জর্মান ভাবাদর্শ
গৌতম দাস