তিনি লালন, মানবিক জ্যোৎস্নায় কম্পিত এক নিঃসঙ্গ সাধক। কালের কৃষ্ণপট ছিঁড়ে যাঁরা আমাদের ঝলমলে দিনের স্বপ্ন দেখিয়েছেন তাঁদেরই একজন তিনি। ধর্মপ্রবর্তক, ধর্মপ্রচারক কিংবা ধর্মসংস্কারকের তকমা তিনি গ্রহণ করতে চাননি। পছন্দ করতেন না বড়লোকি আচার ও ভাব-ভড়ং। তাঁর যে ফকিরি ধর্ম তাতে দীক্ষিত হওয়ার জন্য স্বধর্ম ত্যাগ করা লাগে না।
যে কোনো ধর্মের মানুষ স্বধর্মে অবস্থান করেও লালনিক আচার-কায়কারবার পালন করতে পারে। মানবপ্রেম, মনের মানুষের সন্ধান, অতিথিপরায়ণতা ও পরধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতা দেখানো—লালন দর্শনের মূলনীতি। মনুষ্যত্বের পূজারি তিনি; দেখতেন ভেদবুদ্ধিমুক্ত শোষণহীন এক অখণ্ড মানবসমাজের স্বপ্ন।
যবন-কাফের নয়, মানুষ পরিচয়টাই তাঁর কাছে আসল। জীবনের বাঁকে বাঁকে দাগা খেয়ে খেয়ে জেনেছিলেন যে, আমরা সবাই মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করি। কিন্তু কিছু স্বার্থান্ধ মানুষ শাস্ত্র, কায়কর্ম, জাতধর্ম ও সম্প্রদায় বানিয়ে মানুষকে ছোট খুপরির মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। বলে দেয়, ‘তুমি হিন্দু, তোমার দোকানের চাল খাওয়া যাবে না। তুমি মুসলমান কন্যা, তোমার ছোঁয়া জল পান করা যাবে না।’ উনিশ শতকের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনা করে একুশ শতকীয় ভাবুকতা ও গদ্যশৈলী দিয়ে ভিন্ন এক লালনকে আবদুল্লাহ আল আমিন মেলে ধরেছেন তাঁর লালন ফকির : এক নিঃসঙ্গ সাধক গ্রন্থে।
লালন ফকির এক নিঃসঙ্গ সাধক
আবদুল্লাহ আল আমিন