বাংলা গল্পের মূল ধারা থেকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প একেবারে আলাদা কিছু নয়। আমাদের যাপিত জীবনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির আলোছায়া, প্রত্যাশা-হতাশার দোলাচলে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প। এ ধারার গল্পের পটভূমি কেবল একাত্তরের নয় মাসের মধ্যে সীমিত নয়, পরবর্তী সময়ে প্রাত্যহিক জীবনযুদ্ধের প্রবাহের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তা উত্তরোত্তর বেগবান হয়েছে এবং বাংলা গল্পের প্রবহমান ধারায় নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে।
আমাদের জাতীয় জীভনের সবচেয়ে শৌর্য ও গৌরমবয় অধ্যায় হলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং মহত্তম অর্জন সে যুদ্ধে বিজয় লাভ। সত্যি বটে অর্জনসমূহ আমরা ধরে রাখতে পারিনি। কুটিল রাজনীতির পাঁকে পড়ে হারিয়েছি অনেক কিছুই। তবু সেটা শেষ কথা নয়। এখানেই আবার ঘুরে দাঁড়ানোর আয়োজনও আছে। তাই কেবল একাত্তরের গল্প নয়, চলমান এই মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রবহমান জীবনের গল্পই হয়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের গল্প।
মুক্তিযুদ্ধের উপেক্ষিত অথচ অনিবার্য বিষয়-আশয়গুলো নানা মাত্রায় উদ্ভাসিত হয়েছে এই গ্রন্থে। প্রসঙ্গ একই, তবু এ গ্রন্থের প্রতিটি গল্প ভিন্ন ভিন্ন দিগন্ত স্পর্শ করেছে। উত্তাল একাত্তর তো বটেই, একাত্তরের সময়ের প্রত্যাশা ও হতাশা, বিক্ষুব্ধ গণমানসের অস্থিরতা ও আর্তি শৈল্পিক রূপ লাভ করেছে এসব গল্পে। বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ বলেই গ্রামীণ পটভূমি থেকে বিভিন্ন পাত্রপাত্রী এসে জীবনপাত্র মেলে ধরেছে পাতায় পাতায়।
তারা কেউ গল্পকারের হাতের ক্রীড়নক নয়, বরং জীবনের স্বাভাবিক বিকাশের স্বার্থে ক্ষেত্রবিশেষ লেখকের ভাবনান গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করেছে, আবার নতুন মাত্রায় পথও দেখিয়েছে। আর এদের প্রাণসম্পদের জোরেই গল্পগুলো হয়ে উঠেছে প্রখর গতিময় এবং জীবনমুখী। এই নিয়েই রফিকুর রশীদের মুক্তিযুদ্ধের গল্পসমগ্র।
মুক্তিযুদ্ধের গল্পসমগ্র
রফিকুর রশীদ