স্বাধীনতাপ্রিয় বাঙালির সুদীর্ঘকালের রক্তখচিত লড়াই-সংগ্রাম এবং তারই ধারাবাহিকতায় একাত্তরে সংঘটিত দীর্ঘ নয় মাসের শৌর্যবীর্যময় মুক্তিযুদ্ধ যেমন সার্বভৌম বাংলাদেশের গৌরবদীপ্ত অভ্যুদয়কে নিশ্চিত করেছে, একই সঙ্গে তা বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধ ধারায় যুক্ত করেছে নতুন স্রোত। উন্মোচিত হয়েছে আমাদের সাহিত্যের সম্ভাবনাময় নতুন দিগন্ত। তার নাম মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য। গল্প, কবিতা, নাটকের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসও এই নবীন সাহিত্যসৌধের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হিসেবে ভূমিকা পালন করে চলেছে।
মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস মানে কেবল একাত্তরের রণাঙ্গনের রক্তাক্ত চিত্র কিংবা অস্ত্র-গোলাবারুদের ঝলসানির ছবি আঁকা নয়; বরং বহুকালের বঞ্চিত-লাঞ্ছিত বাঙালির মুক্তির আকাক্সক্ষা, জীবনসংগ্রাম, বিজয় অর্জন এবং কুটিল রাজনীতির চোরাবালিতে পড়ে মহত্তম সে অর্জনসমূহের দিগভ্রান্ত হওয়া; অতঃপর পুনর্বার ঘুরে দাঁড়ানোর বিশাল ও বর্ণাঢ্য ক্যানভাসই চিত্রিত হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসে। একাত্তরের নয় মাসের যুদ্ধকালীন পটভূমির সীমানা অতিক্রম করে পরবর্তী সময়ে প্রাত্যহিক জীবনযুদ্ধের প্রবাহে এ পটভূমি বিস্তৃত হওয়ায় সংখ্যায় বিপুল না-হলেও মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসের এ ধারা দিনে দিনে বেগবান হয়েছে। কথাসাহিত্যিক রফিকুর রশীদের ভিন্নমাত্রিক যে-চারটি উপন্যাসজুড়ে ফুটে উঠেছে মুক্তির আকাক্সক্ষায় লালিত বাঙালির জীবনব্যাপী প্রবহমান যুদ্ধের অসামান্য চিত্র, সেই উপন্যাস চতুষ্টয় এক মলাটে বন্দি করে আগামী প্রকাশনী উপস্থাপন করেছে মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসসমগ্র। উত্তাল একাত্তরের পাশাপাশি একাত্তরোত্তর সময়ের প্রত্যাশা ও হতাশা, বিক্ষুব্ধ গণমানসের অস্থিরতা ও আর্তি শৈল্পিক রূপ লাভ করছে এই সব উপন্যাসে।
মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসসমগ্র
রফিকুর রশীদ