হুমায়ুন আজাদের মহাগ্রন্থ নারী প্রথম বেরোয় ১৯৯২-এ, তারপর বেরোয় তিনটি সংস্করণ ও বহু পুনর্মুদ্রণ; এবং ১৯ নভেম্বর ১৯৯৫-এ সরকার নিষিদ্ধ করে নারী। সাড়ে চার বছর পর উচ্চবিচারালয় রায় দেয় যে নারীর নিষিদ্ধকরণ আদেশ অবৈধ। এ-রায়ের ফলে বাঙলাদেশে প্রথম স্বীকৃতি পেল চিন্তা প্রকাশের স্বাধীনতা। নারী বাঙলা ভাষার প্রথম নারীবিষয়ক গ্রন্থ, যাতে নারীবাদী কাঠামোতে বিশ্লেষণ করা হয়েছে পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতায় নারীর অবস্থা ও অবস্থান। কেউ নারী হয়ে জন্ম নেয় না, পুরুষতন্ত্র ক্রমশ একটি মানুষকে করে তোলে নারী। পুরুষ সৃষ্টি করেছে নারীর অবস্থান, তৈরি করেছে নৃশংস বিধিমালা, করে তুলেছে তাকে কামসঙ্গী ও পরিচারিকা। ইহুদি, খ্রিষ্টান, মুসলমানের চোখে নারী এক অবাধ্য বক্র হাড়, যে স্বর্গে সৃষ্টি করে বিশৃঙ্খলা; হিন্দুর চোখে সে আরো নিকৃষ্ট। পুরুষের চোখে নারী অসম্পূর্ণ মানুষ, এক ‘আপেক্ষিক প্রাণী’। হুমায়ুন আজাদ বর্ণনা করেছেন নারী-পুরুষের লৈঙ্গিক রাজনীতির রূপ, রুশো, রাসকিন, ফ্রয়েড, রবীন্দ্রনাথের নারীবিরোধিতার এবং মিল রামমোহন বিদ্যাসাগরের নারীমুক্তির তাত্ত্বিক ও বাস্তব কর্মরাশি। দিয়েছেন ওলস্টোনক্র্যাফট ও রোকেয়ার গভীর ব্যাখ্যা; বর্ণনা করেছেন নারীর লিঙ্গ ও শরীর, বালিকা কিশোরী তরুণীর বেড়ে ওঠা, ও নারীর স্বপ্ন সমস্যা প্রেম কাম সংসার। তিনি পরিচয় দিয়েছেন নারীবাদী সাহিত্যতত্ত্বে, বিশ্লেষণ করেছেন বঙ্গীয় ভদ্রমহিলার উৎপত্তি এবং বাঙলার নারী ঔপন্যাসিকদের ব্যাখ্যা করেছেন নারীবাদী দৃষ্টিতে, যা আগে কখনো হয়নি। হুমায়ুন আজাদ রূপরেখা তৈরি করেছেন নারী-পুরুষের সাম্যভিত্তিক এক নতুন সভ্যতার। সাড়ে চার বছর ধরে নিষিদ্ধ থাকার পর বেরোলো এ-মহাগ্রন্থ, যার জন্যে উদগ্রীব ছিলেন পাঠকেরা।
নারী
হুমায়ুন আজাদ