ভাষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার অর্থ; প্রথাগত রূপক ব্যবহার ক’রে বলা যায় অর্থই ভাষার প্রাণ। কয়ে সহস্র ধ’রে মানুষ তার ভাষা বর্ণনা, বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা ক’রে আসছে; খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে ভাষার ধ্বনি, শব্দ, বাক্য ও অর্থের সূত্র; এবং অর্জন করেছে বিপুল সাফল্য, যদিও আজো চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়নি। তবে ধ্বনি, শব্দ, বাক্য বর্ণনায় যতটা সাফল্য অর্জিত হয়েছে, অর্থ বর্ণনায় তা আজো হয়নি; কেননা অর্থ সবচেয়ে অধরা, সবচেয়ে রহস্যময়, সবচেয়ে বিমূর্ত। গত কয়েক দশকে পশ্চিমে ধ্বনি, রূপ, বাক্য বর্ণনায় বিজ্ঞানসম্মত তত্ত্ব ও পদ্ধতি বেরিয়েছে; কিন্তু অর্থ রয়ে গিয়েছিল ভাষাবিজ্ঞানের সীমার বাইরে। সাংগঠনিক ভাষাবিজ্ঞানীরা অর্থকে অবৈজ্ঞানিক ব’লে বের ক’রে দিয়েছিলেন ভাষাবিজ্ঞান থেকে, ছেড়ে দিয়েছিলেন মহাকালের হাতে; রূপান্তর ব্যাকরণের আবির্ভাবের পর অর্থও বর্ণনার বিষয় হয়ে ওঠে, নানা উদ্যোগ নেওয়া হয় অর্থের তত্ত্ব সৃষ্টির ও অর্থবর্ণনার। উল্লসিত হওয়ার মতো সাফল্য অর্জিত হয়নি আজো। তবে হতাশা কেটে গেছে; অর্থবিজ্ঞান এখন বিজ্ঞান হওয়ার পথে। বাংলায় অর্থবিজ্ঞানের চর্চা শুরু হয়নি; ডক্টর হুমায়ুন আজাদের এ–বইটি দিয়ে শুরু হলো। অর্থবিজ্ঞান-এ পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে অর্থবিজ্ঞানের মূল ধারণাগুলোর সাথে। বইটিতে আলোচিত হয়েছে অর্থবিজ্ঞানের সমস্যাগুলো, অর্থবিজ্ঞানের পরিসীমা, শাব্দ অর্থবিজ্ঞান, পরিস্থিতির প্রসঙ্গ, বাক্যের আর্থ সংসঠন, অভিধানতত্ত্ব প্রভৃতি। ভাষা ও ভাষাবিজ্ঞানে উৎসাহীরা তৃপ্তি পাবেন এ-বই প’ড়ে, উত্তর পাবেন তাঁদের অজস্র প্রশ্নের।
অর্থবিজ্ঞান
হুমায়ুন আজাদ