২০০৪ সালের আগে জাপানি ভাষার তিন পঙক্তিবিশিষ্ট ক্ষুদ্রতম কবিতা ‘হাইকু’র অনুসরণে যাঁরা বাংলা ভাষায় এর চর্চা করেছেন তাঁরা সবাই মুখে-মুখে কিংবা বইয়ের ভূমিকায় বলতেন: হাইকুর তিন পঙক্তি বিন্যস্ত হবে ৫-৭-৫ মাত্রায়। কারণ, জাপানিরা এই আঙ্গিক ও ছন্দপ্রকরণ মেনে চলেন। বাস্তবে হাইকু রচনায় আমাদের কোনো কবিই ছন্দপ্রকরণের ধার ধারেননি, যে যার নিয়মে লিখেছেন। দুয়েকজন স্বরবৃত্ত ছন্দের নামে যেভাবে ৫-৭-৫ মাত্রায় পঙক্তি সাজিয়েছেন, তা শাস্ত্রসম্মত নয়, কারণ, স্বরবৃত্ত ছন্দে ৫ ও ৭ মাত্রার পর্ব নেই। অতিপর্ব ও অপূর্ণপর্ব সহযোগে স্বরবৃত্তীয় যে ৫ ও ৭ মাত্রার পঙক্তি তৈরি হয় তার-ও একত্রবাস (মিশ্রণ) সমন্বিতভাবে ধ্বনিগত দিক থেকে অশ্রাব্য ঠেকে। ২০০৪ সালে একটি সমীক্ষা শেষে আবিদ আনোয়ার হাইকুর জন্য মাত্রাবৃত্তীয় ৫-৭-৫ মাত্রার যে প্রকরণ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, ছন্দশিক্ষিত সব কবিই এখন এই প্রকরণে বাংলা ভাষায় হাইকু লিখছেন। এই বইটি পড়লে পাঠক বুঝতে পারবেন বাংলা হাইকু কীভাবে আবিদ আনোয়ারের হাতে ৫-৭-৫ মাত্রার প্রকরণ পেল এবং উভয় বাংলায় তা সমাদৃত হলো। ফরাসি ও ইংরেজ কবিদের হাইকুচর্চা বিষয়েও বইটিতে রয়েছে তথ্যবহুল মনোজ্ঞ আলোচনা। শুধু তত্ত্ব আলোচনাই নয়, এই বইতে রয়েছে ‘প্রকরণসিদ্ধ বাংলা হাইকুর পথিকৃৎ’ হিসেবে স্বীকৃত কবি আবিদ আনোয়ার-এর নিজের লেখা ১২০টি বাংলা হাইকু। প্রতিটি হাইকুর ছোট্ট অবয়বে গভীর ভাবনার শিল্পিত প্রকাশ ঘটেছে, যা মানসম্পন্ন হাইকু রচনায় ভাবীকালের রচয়িতাদের অনুপ্রাণিত করবে। বিদেশি ভাষা থেকে আগত সনেট ও লিমেরিক বাংলা ভাষায় যেভাবে নির্দিষ্ট আঙ্গিক ও প্রকরণ পেয়েছে, বিলম্বে হলেও সেভাবেই জাপানি হাইকুর-ও বাংলায়ন সম্পন্ন হলো। এই বইতে দেখানো হয়েছে তার পথপরিক্রমা।
প্রকরণসিদ্ধ বাংলা হাইকু: বিলম্বিত অভিযাত্রা
আবিদ আনোয়ার