বাংলা সাহিত্যের প্রথম শ্রেণির তিনজন খ্যাতিমান কথাশিল্পী শওকত ওসমান, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ও আবু ইসহাক। এ তিনজন ঔপন্যাসিক তাঁদের উপন্যাসসমূহে শাসকগোষ্ঠীর অমানুষিক অত্যাচার, শাসন-শোষণ, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িক মনোভাব ও তাদের অমানবিক মূল্যবোধের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন দক্ষতার সঙ্গে। উপরস্তু তাঁরা মানুষের অলৌকিক শক্তিতে নির্ভরতা, ধর্মীয় বিশ্বাস, সমাজের নৈতিক-অনৈতিক, ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, অকল্যাণ এবং মানবিক ও অমানবিক মূল্যবোধসমূহ অবলীলায় তুলে ধরেছেন তাঁদের কথাসাহিত্যে।
বিভাগ পূর্বকাল ও বিভাগোত্তর কালের সমাজচিত্র, রাজনৈতিক ঘটনাবলি, ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান সর্বোপরি আমাদের স্বায়ত্তশাসন, স্বাধিকার আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের নানা দিকসহ সামাজিক মূল্যবোধের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন ঔপন্যাসিকত্রয়। শওকত ওসমানের, ‘ক্রীতদাসের হাসি’, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘লালসালু ও আবু ইসহাকের ‘সূর্য- দীঘল বাড়ী’ তে সামাজিক মূল্যবোধের সম্যক প্রকাশ ঘটেছে। গবেষক দক্ষতার সঙ্গে সহজ-সরল ভাষায় উপন্যাসের ঘটনাবিন্যাস, বিষয়বস্তু, চরিত্রায়ণ ও শিল্পরূপ অঙ্কন করেছেন মুল্যবোধের ভিত্তিতে। বস্তুত তাঁর গদ্যশৈলী স্বকীয় ও ঋজু। বিশেষভাবে শওকত ওসমানের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসগুলোতে একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত ও মুক্তিযুদ্ধের দুঃসহ দিনগুলোর শাসকগোষ্ঠীর নির্মম অত্যাচারের চিত্র ফুটে উঠেছে। আমাদের দেশে সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে গবেষণা এই প্রথম। সেদিক থেকে ‘শওকত ওসমান, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ও আবু ইসহাকের উপন্যাসে সামাজিক মূল্যবোধ’ গ্রন্থটি উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী এবং গবেষকদের মধ্যে সমাদৃত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
গণতন্ত্র ও সামাজিক মূল্যবোধকে বিকশিত করার মধ্য দিয়ে একটি ন্যায় ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। দেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের সংযম, সততা ও নৈতিক মূল্যবোধের উজ্জীবন প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রেও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধকল্পে গ্রন্থটির গুরুত্ব অপরিসীম।
শওকত ওসমান, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্, আবু ইসহাকের উপন্যাসে সামাজিক মূল্যবোধ
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন