শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৯ সালে । বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঠিক চার বছর পর। এপর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এটিই ছিল প্রথম পূর্ণাঙ্গ সংকলন । সকল বিবেচনায় এটাকে একটি দুঃসাহসী উদ্যোগই বলা চলে। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচে’ খলনায়ক জেনারেল জিয়াউর রহমান তখন রাষ্ট্রের সকল দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। রাস্তায় রাস্তায় সামরিক প্রহরা। সর্বত্রই উদ্যত সঙ্গিন হাতে ঘাতকের উদ্ধত পদচারণা। বঙ্গবন্ধ চরম নিষিদ্ধ একটি নাম। তাঁর নাম উচ্চারণও রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। সংকলনটি প্রকাশের কয়েক মাসের ভেতর এর ১২৫০ কপি বিক্রি হয়ে যায়। তারপরেও চাহিদা ছিল প্রচুর। এতোদিনে এর কয়েকটি সংস্করণ প্রকাশিত হওয়া উচিত ছিল । কিন্তু তা হয় নি। কারণ এর জন্যে যে-ধরনের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশে তার অভাব বরাবরই অত্যন্ত প্রকট। দীর্ঘ উনিশ বছর পর শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ এর দ্বিতীয় পরিবর্ধিত সংস্করণ প্রকাশিত হলো। এখন দৃশ্যপট অন্য রকম। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এতো গ্রন্থ, সংকলন এবং লেখা প্রকাশিত হচ্ছে যে একনিষ্ঠ গবেষকের পক্ষেও তার বিশদ খোঁজখবর করা দুষ্কর। বেতার, টেলিভিশন, পত্রপত্রিকাসর্বত্রই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কার কত বেশি ভক্তি-তা প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা চলছে। চলছে অশ্রুপাতের নানারকম প্রকাশ্য মহড়া। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যারা সদম্ভে উল্লাস করেছেন, যেসব লেখক-বুদ্ধিজীবী শার্টের আস্তিন শুটিয়ে বঙ্গবন্ধুর অনুসারীদের দিকে তেড়ে এসেছেনে, আজকে তারাই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কিংবা টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুর জন্যে সমানে অশ্রুপাত করে চলেছেন। বাস্তবিকই এ বড়ো বিপজ্জনক দৃশ্য। শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ। এর দ্বিতীয় পরিবর্ধিত সংস্করণ প্রকাশের পেছনে। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এ-পর্যন্ত যতো লেখালেখি হয়েছে- সেগুলিকে একটি সংকলনভুক্ত করা । মোট ৬৮৩ পৃষ্ঠার এই সংকলনে। ৯০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা প্রবন্ধ, ৫০ জন কবির কবিতা, ৬টি গল্প ও একটি সাক্ষাৎকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ।
শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ
মোনায়েম সরকার