একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয়, এই গ্রন্থের লেখক আলতাফুর রহমান তখন পিতার চাকরি সূত্রে পরিবারের সঙ্গে পাকিস্তানের বিখ্যাত বাণিজ্যিক শহর করাচিতে বসবাস করতেন। এই শহরে সংখ্যালঘু বাঙালিরা ছিল অপরিসীম বৈষম্যের শিকার, বলতে গেলে সর্বক্ষেত্রেই । ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে জনতার ঐতিহাসিক রায়ে বিজয়ী হলেও পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠি বাঙালিদের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা তুলে দিতে শুরু করে তালবাহানা । ফলে বাঙালিরা অসহযোগ আন্দোলন শুরু করতে বাধ্য হয় । তারই পরিণতিতে শুরু হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ । ‘শত্রুর মাটিতে মুক্তিযুদ্ধ’ গ্রন্থের লেখক জনাব আলতাফুর রহমান তাঁর জীবনের অন্যরকম কথা বলেছেন । বলেছেন করাচিতে থাকার সময়ই মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় কারো প্ররোচনায় নয়, একেবারেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলমান মুক্তিযুদ্ধে নিজেকে সম্পৃক্ত করার বাসনা থেকে তাঁর বোমা তৈরির চেষ্টার কথা, স্কুলে একত্রিত হয়ে ‘বেঙ্গল রেভোলুশনারি আর্মি’ বন্দি বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার লক্ষ্যে তার কল্পনাচারিতার কথা, করাচি থেকে ঢাকায় ফিরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য আগরতলায় যাওয়ার কথা, বাংলাদেশ সরকারের পরিচয়পত্র গ্রহণের কথা এবং পাক সেনাদের গোলাগুলির সম্মুখীন হয়ে মৃত্যুর প্রহর গোনার কথা, আবার করাচিতে ফিরে প্লেন হাইজ্যাক করে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত এবং বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ের কথা । অবশেষে লেখক ও তাঁর জন কয়েক বন্ধু বন্দি হন । সম্মুখীন হন মার্শাল ল কোটের কঠোর বিচারের । এসব-কিছুরই বর্ণনা লেখক তুলে ধরেছেন অনুপুঙ্খভাবে এই গ্রন্থের মাধ্যমে, যা পাঠ করে পাঠকবৃন্দ প্রতি মুহূর্তে অনুভব করবেন গভীর রোমাঞ্চ । এক নিঃশ্বাসে পাঠ করার মতো গ্রন্থ ‘শত্রুর মাটিতে মুক্তিযুদ্ধ’।
শত্রুর মাটিতে মুক্তিযুদ্ধ
আলতাফুর রহমান