সমাজসচেতন জীবনঘনিষ্ঠ সাহিত্যকর্মে নিবেদিতপ্রাণ লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রেণিবৈষম্য, শোষণ, নিপীড়ন, সামাজিক অসংগতির বিরুদ্ধে সোচ্চার তার লেখনী। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত তার লেখনীতে বিশাল বিস্তীর্ণ পটভূমিকায় সাধারণ মানুষের বস্তুনিষ্ঠ জীবনচিত্র যেমন অঙ্কন করেছেন, তেমনি মানুষের কর্মে পিপাসায় জীবনচিত্র তুলে ধরতে গিয়ে আদিমতার অন্ধকারে ফিরে গেছেন বারবার। অদ্ভুত নিরাসক্তভাবে তিনি মানুষের জীবন ও সমস্যাকে দেখেছেন, সমাধানের চেষ্টাও করেছেন বুদ্ধি ও লেখনীতে। নরনারীর জৈবসত্তা বিকাশের নানাদিক তাকে আকৃষ্ট করেছিল। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন-অভিজ্ঞতা ছিল ব্যাপক ও গভীর। ফলে তিনি জীবনের দিকটি দেখতেন তার সমগ্রতায়। খণ্ড খণ্ড করে নয়, অখণ্ডতায়। এটি তার প্রধান গুণ এবং লেখকমাত্ররই শ্রেষ্ঠ গুণ। তিনি যেমন ফ্রয়েডীয় মতবাদে প্রভাবিত হয়েছেন, ঠিক তেমনি মনুষ্য জীবনের মুক্তি দেখেছেন মার্কসবাদে। মানকি বন্দোপাধ্যায় যখন কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের মুখে এসেছিলেন, তখন থেকেই বাঙালির মধ্যবিত্ত জীবনে সার্বিক অবস্থার চেতনা চারপাশ থেকে ঘিরে চেপে বসতে চাইছিল। বিশ্বজোড়া মধ্যবিত্ত বৈমানসিকতা বোধের তাড়নায় বাংলা সাহিত্য তখন পীড়িত। পাঠকের অভিজ্ঞতায়ও এ নিয়ে তারতম্য ছিল না। তাই তার অন্তরের আকাঙ্ক্ষা ছিল অন্ধকারে নিরবছিন্নতাকে উৎরিয়ে উত্তরণের পথ খোঁজার। সেই জন্যই তিনি স্মরণীয় ও বরণীয়।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্পকার। তার সাহিত্য অনিবার্য পাঠ। তাঁর এই গল্পসংকলন নিঃসন্দেহে সাহিত্যপ্রিয় পাঠকের কাছে বরাবরের মতো সাদরে গৃহীত হবে।
শ্রেষ্ঠ গল্প
জুন ২০২১