ইতিহাসের নানা অজানা তথ্যের উৎস প্রত্নলিপি। বাণীর তাৎপর্যে, শৈল্পিক স্ফূর্তিতে আর রূপের বৈচিত্র্যে এগুলো দারুণভাবে সমৃদ্ধ। বাংলার ইতিহাসের এক ক্রান্তিকালের সাংস্কৃতিক গতিপ্রকৃতি বুঝতে এবং এই অঞ্চলে ধর্মীয় রূপান্তরের জটিল প্রক্রিয়া অনুধাবন করতে এগুলো অপরিসীম সাহায্য করে। শিলালিপিতে ফার্সী ভাষার ব্যবহার সর্বপ্রথম যেসব অঞ্চলে দেখা দেয়, তার অন্যতম হলো বাংলা অঞ্চল। এগুলোতে লুকিয়ে থাকা বার্তাগুলো সে যুগের ধর্মীয় সম্প্রীতি, সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতা ও জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে নানা পরিচয়ের মানুষের পারস্পরিক বোঝাপড়ার অমূল্য ঐতিহাসিক দলিল। ইসলামী স্থাপত্য অলংকরণে লিপিকলার স্থান বিশিষ্ট। এসব লেখমালার লিপিশৈলী, শৈল্পিক উৎকর্ষ ও লিখিত বয়ানের মূল্যবান তথ্যের মধ্য দিয়ে মুসলিম বিশ্বের নানা অঞ্চলের মধ্যে সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতার এক পরিচয় মেলে, যা ‘মধ্যযুগীয় দুনিয়ার বিশ্বায়নে’র এক অনন্য নমুনা। প্রত্নলিপিগুলোর চিত্রায়ণ ও বিষয়বস্তু থেকে বোঝা যায় যে ইসলাম গ্রামবাংলার সহজ-সরল প্রকৃতিলগ্ন জীবনযাত্রার সাথে মিলেমিশে ক্রমান্বয়ে একাকার হয়ে উঠেছিল। শিলালিপিগুলোতে একদিকে যেমন আঞ্চলিক বৈচিত্র্য ফুটে উঠেছৈ, অন্যদিকে এগুলোতে বহুত্ববাদী বাঙালি সংস্কৃতি এবং একই সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’ বার্তাটিও ধ্বনিত-অনুরণিত হয়েছে।
নিদ্রিত শিলার মুখরিত লিপি: বাংলার আরবী-ফার্সী লেখমালা (১২০৫-১৪৮৮)
মুহম্মদ ইউসুফ সিদ্দিক