তরুণ মার্কসের রাজনৈতিক-দার্শনিক লেখালিখি আশ্রয় করেই লেখাগুলো আবর্তিত হয়েছে ।আবর্তনের কেন্দ্র বিন্দু তরুণ মার্কসের ব্যবহারিক সম্বন্ধ’ নামক ধারণার পর্যালোচনা এবং মার্কসকে নতুন ভাবে পাঠ ও আত্মস্থ করবার সম্ভাবনা বিচার । লুদভিগ ফয়েরবাখ (১৮৭৪-১৮৭২)সহ সকল বস্তুবাদের পর্যালোচনা করতে গিয়ে কার্ল মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩)বস্তুবাদের প্রধান দোষ হিসাবে ব্যবহারিক সম্বন্ধ’ধারণাটির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।বলেছিলেন,ফয়েরবাখসহ মার্কসের জানা সকল বস্তুবাদের প্রধান দোষ হচ্ছে তারা।‘ইন্দ্রিয়পরায়ণতাকে ব্যবহারিক,ইন্দ্রিয়পরায়ণ মানুষের তৎপরতা বা সংক্ষেপে মানুষের সঙ্গে জগতের ‘ব্যবহারিক সম্বন্ধ’ধরতে,বুঝতে ও ব্যাখ্যা করতে পারে না। বস্তুবাদের এই প্রধান দোষ পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে মার্কস কিভাবে দর্শনের পরিমণ্ডলের বাইরে মানুষ ও জগতের ব্যবহারিক সম্বন্ধ পর্যালোচনার জন্য অর্থশাস্ত্রে প্রবেশ করলেন এই বইটি তারই গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা এবং দার্শনিক পর্যালোচনা ।মার্কসের পরে অর্থশাস্ত্র,অর্থাৎ মানুষ বৈষয়িক জীবনের উৎপাদন ও পুনরুৎপাদনের মধ্য দিয়ে মানুষ কিভাবে বর্তমান কিম্বা ‘জাগতিক’ হয় তারই যুক্তি ফরহাদ মজহার এই বইতে পেশ করেছেন ।মানুষের জাগতিক হওয়ার অর্থ পারলৌকিকতার বিপরীতে ইহলৌকিকতা কিম্বা ইহলোক বাদ দিয়ে পারলৌকিক অস্তিত্ব যাপন নয় ।ইহলোকেরই মানুষ পরলোকের কথা ভাবে ।পারলৌকিকতা মানুষের ইহলৌকিক কিম্বা জাগতিক অস্তিত্বেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ ।ইহলোক/পরলোকের এই প্রথাগত বাইনারি ভেঙে দিয়ে এই বই ‘রুহানিয়াত’নিয়ে আলোচনার নতুন দার্শনিক ক্ষেত্র যেমন তৈরি করে,তেমনি একই ভাবে ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর রাজনৈতিক রুহানিয়াত ।(Political Spirituality) নিয়ে আলোচনার সদর দরজা উন্মোচন করে ।ইরান বিপ্লবের মধ্যে ফুকো ।‘রাজনৈতিক রুহানিয়াত’-এর সক্রিয় ও বৈপ্লবিক ভূমিকা প্রত্যক্ষ করেছেন ।ইরানের বিপ্লব তাঁর চিন্তাকে বিপুল ভাবে প্রভাবিত করেছে ।যারা একাধারে দর্শন এবং বিপ্লবী রাজনৈতিক সংকল্পে সমান ভাবে উদ্বুব্ধ এই বই তাদের জন্য ।
মার্কস, ফুকো, ও রুহানিয়াত
ফরহাদ মজহার